• মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পর ফুলবাড়ীর আঁখিরা বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ

  • ''
  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর পর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আঁখিরা গণহত্যার বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোহাম্মাদ জাফর আরিফে চৌধুরীর নেতৃত্বে বীর মুক্তিযোদ্ধসহ সুধিজন আঁখিরা বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন।

পরে বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ চত্বরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. এছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অম্বরিশ রায় চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল কাশেম আকন্দ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোজাম্মের হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. তোজাম্মেল হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শচিন্দ্র নাথ দাস, আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাকির বাবলু, ইউপি সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক, ইউপি সদস্য মো. ইদ্রিস আলী, ইউপি সদস্য অর্পণ রায়, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক প্লাবন শুভ প্রমুখ।

শেষে ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল আঁখিরা পুকুর পাড়ে পাকিস্তানী খানসেনাদের হাতে আত্মহুতিদানকারী বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামভন্দ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুরের শেরপুর, ভবানীপুর, বদরগঞ্জ ও খোলাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড়শতাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতিসহ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ফুলবাড়ীতে নিয়ে আসে। এরপর রাজাকার কেনান সরকার অস্ত্রের মুখে বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকা অর্থ সম্পদসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে তাদেরকে খানসেনাদের হাতে তুলে দেয়। খানসেনারা ওইদিন সকাল ১১টার দিকে উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাট সংলগ্ন আঁখিরা নামের পুকুর পাড়ে নিয়ে সবাইকে লাইনে দাঁড় করায়। লাইনে দাঁড়ানোরা কোনো কিছু বোঝার আগেই মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করে খানসেনারা।

এরপরও যারা বেঁচে ছিলেন তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি’র প্রচেষ্ঠায় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে আঁখিরা বধ্যভূমিতে ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। নির্মাণ কাজ একই বছরের ডিসেম্বর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন বছরেও কাজটি শেষ না হওয়ায় অর্ধ সমাপ্ত ও অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে নির্মাণাধিন স্মৃতিস্তম্ভটি। দীর্ঘ ৫৩ বছর পর সেই নির্মাণাধিন স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads